একাধিক পদ্ধতিতে বদনজরের চিকিৎসা করা যায়ঃ
প্রথম পদ্ধতিঃ আব্দুল্লাহ লেখা পড়ায় ভাল। রেজাল্ট শীট দেখার পর আব্দুল্লাহর আব্বু খুবই চমৎকৃত হলেন। নানাভাবে আব্দুল্লাহর প্রশংসা করলেন। আব্দুল্লাহর আম্মু খেয়াল করে দেখলেন সেদিনের পর থেকে আব্দুল্লাহ পড়ালেখায় মন দিচ্ছে না। শুধু দুষ্টুমির চিন্তা করে, একদম কথা শুনে না। তিনি সন্দেহ করলেন নজর লেগেছে।
তিনি আব্দুল্লাহর আব্বুকে অযু করতে বললেন। অযুর ব্যবহার করা পানিটা তিনি বালতিতে নিলেন। সেই হাত, পা, মুখ ধোয়া পানি গোসলের আগে আব্দুল্লাহর গায়ে ঢেলে দিলেন। এরপর থেকে আব্দুল্লাহ একদম আগের মত হয়ে গেল। পড়াশুনা করতে পারছে, দুষ্টুমিও করছে না।
জ্বী, এটাই প্রথম পদ্ধতি। যদি আপনি জানেন কার নজর লেগেছে তাহলে তার অযুর পানি নিবেন, এরপর রোগীর গায়ে ঢেলে দিবেন। ইন শা আল্লাহ, রোগী সুস্থ হয়ে যাবে। এই পদ্ধতি বাচ্চা, প্রাপ্তবয়স্ক সবার জন্য প্রযোজ্য হবে।এই পদ্ধতি একবার অনুসরণ করলেই রোগী আল্লাহর হুকুমে সুস্থ হয়ে যায়।
দ্বিতিয় পদ্ধতিঃ এখন প্রশ্ন আসে যে, যদি আব্দুল্লাহর আম্মু না জানতেন কার নজর লেগেছে তাহলে কিভাবে কার অযুর পানি নিতেন?
কারও অযুর পানি নিতে হত না। আব্দুল্লাহর মাথায় হাত রেখে নিচের দুআ' ও আয়াতগুলো পড়তেন। অথবা পড়ার পর আব্দুল্লাহর গায়ে ফু দিতেন। এতেও ইন শা আল্লাহ নজর কেটে যেতে। প্রতিদিন তিনবেলা এই পদ্ধতি ফলো করে ঝাড়ফুঁক করলে ইন শা আল্লাহ রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে।
اُعِيْذُ كُمْ بِكَلِماَتِ اللهِ التَّا مَّةِ، مِنْ كُلِّ شَيْطَا نٍ وهَا مَّةٍ، و مِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
উচ্চারণঃ উ'ইযুকুম বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মাতি মিন কুলি শাইত-নিন- ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিন কুল্লি আঈ'নিন লা-ম্মাহ।
بِسْمِ الَّةِ اَرْقِيْك، مِنْ كُلِّ شَيْ ءٍ يُوْ ذِيْكَ، مِنْ شرِّ كُلِّ نَفُسٍ اَوْ عَيْنِ حَاسِر، اَللهُ يَشْفِيْك، بِسْمِ اللهِ اَرْقِيْك
উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হি আরকিক। মিন কুল্লি শাইয়িই ইউ'যিক। মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও 'আইনি হাসিদ। আল্লা-হু ইয়াশফিক। বিসমিল্লা-হি আরকিক।
بِسْمِ اللهِ يُبْرِيْكَ، وَ مِنْ كُلِّ رَا ءٍ يَشْفِّيْكَ، وَ مِنْ شَرِّ حَا سِرٍ اِذَا حَسَرَ، وَ شَرِّ كُلِّ ذِيْ عَيْنٍ
উচ্চারনঃ বিসমিল্লা-হি ইউবরিক। ওয়ামিন কুল্লি দা-ইন ইয়াশফিক। ওয়ামিন শাররি হাসিদিন ইযা-হাসাদ। ওয়া শাররি কুল্লি যি 'আইন।
اَللهُمَّ رَبَّ النَّاسِ اَذْ هِبِ الْبَاسَ اِشْفِ وَ اَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ اِ لَّا شِفاؤُكَ شِفَا ءً لَا يُغَارِرُ سَقَمًا
উচ্চারনঃ আল্লা-হুম্মা রব্বান না-স আযহিবিল বা'স। ইশফি ওয়াআনতাশ শা-ফি। লা-শিফাআ ইল্লা-শিফাউকা, শিফাআন লা-ইউগা-দিরু সাকামা-।
এরপর কয়েকবার সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়তে হবে।
রোগী যদি বেশি অসুস্থ হয় তাহলে মাথায় হাত রেখে পড়ার পর বা গায়ে ফুঁ দেবার পর পানিতে ফুঁ দিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করানো উচিত। এতে ইন শা আল্লাহ দ্রুত আরোগ্য লাভ হবে। এভাবে পর পর কয়েকদিন করা উচিত।
এই পদ্ধতি সাধারনত নাবালেগ বাচ্চাদের জন্য অনুসরণ করতে বলা হয়। তবে সাবালকরা করলেও উপকার পাবেন ইন শা আল্লাহ। মনে রাখা দরকার, সাবালকদের জন্য নিচের পদ্ধতি (তৃতীয় পদ্ধতি) অনুসরণ করা উচিত। একান্ত অসুবিধা হলে দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুসরণ করবে।
তৃতীয় পদ্ধতিঃ নিজেই নিজের সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করার জন্য এটি একটি উত্তম পদ্ধতি। কারও কাছে যেতে হবে না, কাউকে পয়সা দিতে হবে না, কাউকে অনুরোধ করতে হবে না। সব কিছু নিজেই করা আর নিজেই ব্যবহার করা। আল্লাহ চাইলে এতে আরোগ্য লাভও তাড়াতারি হবে।
এই পদ্ধতিতে দু'টো কাজ করতে হয়ঃ
- ঝাড়ফুকের আয়াত তেলাওয়াত করা / তেলাওয়াতের রেকর্ডিং শোনা
- পড়া পানি দিয়ে গোসল করা
মনে রাখতে হবে, তেলাওয়াত করা সর্বোত্তম। রেকর্ডিং বা অডিও শোনা তেলাওয়াতের দুর্বল বিকল্প মাত্র। নিজে তেলাওয়াত করতে না পারলে, উচ্চারন শুদ্ধ না থাকলে অথবা মেয়েদের হায়েজ/নেফাসের সময় যেন চিকিৎসা করা বাদ না যায় সেজন্য রেকর্ডিং শুনে হলেও চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
বদনজরের রুকইয়াহ করার জন্য এই আয়াতগুলো তেলাওয়াত করবেন। ইচ্ছা হলে আপনি নিজের তেলাওয়াত রেকর্ড করতে পারেন। পরবর্তীতে সেই রেকর্ড শুনে রুকইয়াহ করতে পারবেন।
গোসলের জন্য একবালতি পানি নিন। টয়লেট আর গোসলখানা যদি একসাথে থাকে তাহলে বালতি ঘরে নিয়ে আসবেন। এরপর দুইহাত ডুবিয়ে দিন যতটুকু ডুবানো যায়। এবার যেকোন দরূদ শরীফ ৭ বার, সুরা ফাতিহা ৭ বার, আয়াতুল কুরসী ৭ বার, সুরা ইখলাস ৭ বার, সুরা ফালাক ৭ বার, সুরা নাস ৭ এবং সবশেষে আবার যেকোন দরুদ শরীফ ৭ বার পড়ুন। পড়া শেষ হলে গোসলখানায় যেয়ে পড়া পানি আগে গায়ে ঢালবেন। এরপর ইচ্ছামত গোসল করতে পারবেন।
বিঃদ্রঃ
- বদনজরের রুকইয়াহ একটানা ২-৩ সপ্তাহ করা উচিত। নিজের উন্নতি অবনতির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত।
- দ্বিতীয় ও তৃতীয় পদ্ধতিতে দুই একদিন করার পর ভাল লাগলে বন্ধ করে দেয়া উচিত নয়। একটানা করে যাওয়া উচিত।
- তৃতীয় পদ্ধতি ফলো করে রুকইয়াহ করছেন এরই মধ্যে পিরিয়ড শুরু হয়ে গিয়েছে, এমন অবস্থায় রেকর্ডিং শুনবেন। গোসলের পানি অন্যকেউ তৈরি করে দিবে। যদি তৈরি করে দেয়ার মত কেউ না থাকে তাহলে ২য় পদ্ধতিতে বলা চারটি দুআ ৭ বার করে পড়ে (আরও বেশি পড়লে আরও ভাল) পানিতে ফু দিবেন। এরপর সেই পানি দিয়ে গোসল করবেন।
বদনজর সংক্রান্ত সাধারন কিছু প্রশ্নের উত্তর পাবেন এখানে। আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করুন। আল্লাহ তৌফিক দিলে বলার চেষ্টা করব।