অমুসলিম হলে কি রুকইয়াহ করতে পারবে? কিভাবে করবে?

জ্বি, রুকইয়াহ সবাই করতে পারবে। মুসলিম/অমুসলিম কোনো ভেদাভেদ নেই এখানে। মুসলিমরা যেভাবে রুকইয়াহ করে, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-অন্যরাও সেভাবেই কর...

Search This Blog

Wednesday, December 30, 2020

রুকইয়াহ ফ্যান্টাসি

রুকইয়াহ নিয়েও মানুষ ফ্যান্টাসিতে ভুগে। বিশ্বাস হয়?

কেমন ফ্যান্টাসি? ধরেন, কেউ একজন তার সমস্যা লিখলো। সেখানে এডাল্ট কিছু বিষয় চলে আসলো। এখন এই পোস্ট দেখে দুই একজন আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে তার কেন এমন হয় না। তাহলে তার *ন চাহিদা পূরণ হয়ে যেত। জিনের সাথে তার দহরম মহরম থাকতো, প্রেম-ভালবাসার সম্পর্ক থাকতো, এই হত, ঐ হত।
আচ্ছা আপনারা কি ক্যান্সারের পেশেন্ট দেখলে নিজের ক্যান্সার হবার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন? এইডসে আক্রান্ত কারও কথা শুনলেও কি এই আগ্রহ থাকে? শ্বেতী রোগিদের চামড়া সাদা হয়ে যায়। আপনার চামড়া যেন সাদা হয় সেজন্য আপনি শ্বেতী রোগ হবার দুআ' করেন?

রুকইয়াহর বিকল্প

রুকইয়াহ তথা ইসলামসম্মত ঝাড়ফুক করে যে সুস্থ হওয়া আল্লাহর রহমতে সম্ভব এটা কয়েকবছর আগেও এদেশে তেমন কেউ জানতো না। বিশ্বাস করতো আরও কম। কিন্তু বর্তমানে এটা কয়েক লক্ষ লোকের কাছে বাস্তবতা।

আচ্ছা যখন রুকইয়াহ ছিল না তখন মানুষ কি করতো? - এই প্রশ্ন যদি করি আপনি বলবেন কবিরাজ, হুজুরদের খপ্পড়ে পড়তো। এর বাইরেও কথা আছে। তখনও সচেতন মানুষ ছিল যারা এসব কুফুরির ধারে কাছেও যেত না এবং তারা সুস্থও হত। কিভাবে হত? চিন্তার বিষয় আছে এখানে।

নিজের পরিবারের লোকই যদি জাদু করে তাহলে কি করনীয়?

দুইটি সুরত হতে পারে। যেমনঃ

এক. পরিবারের লোকই সরাসরি জাদু করে। যেমন, মা করতে পারে সন্তানকে, বোন তার অন্য বোনকে, বাবা করতে পারে তার মেয়েকে ইত্যাদি। প্রশ্ন উঠতে পারে, আসলেই কি এমন হয়? জ্বি, হয়।
দুই. নিজে জাদু করে না বরং কাউকে দিয়ে করায়। এমন তো অভাব নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন হয়ে থাকে। কবিরাজ, বৈদ্য, তান্ত্রিক, হুজুর দিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই কাজ করে থাকে।

একই ফ্যামিলিতে একাধিক বদনজর, জিন, জাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তি থাকলে করনীয়

এমন পরিবার অনেক আছে বাংলাদেশে। পুরো পরিবার আক্রান্ত। নাহয় ভাই-বোন আক্রান্ত না হয় স্বামী-স্ত্রী আক্রান্ত। এসব ক্ষেত্রে শয়তান পরস্পরের সহযোগি হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি দুই বোনের যাদুর প্রবলেম হয় তাহলে একবোন রুকইয়াহ করলে অন্যবোনের পিছনে লেগে থাকা শয়তান প্রথম বোনের পিছনে লেগে থাকা শয়তানকে সাহায্য করে, উৎসাহ যোগায়। মানে তারা একজোট হয়ে যেবোন রুকইয়াহ করছে তার পিছনে লাগতে পারে।

কাজেই এসব ক্ষেত্রে রুকইয়াহ করা যেমন কষ্টসাধ্য হয় তেমনি দীর্ঘমেয়াদি হয়। ১-২ বছর ধরে রুকইয়াহ করছেন কিন্তু আপনার সমস্যা দূর হচ্ছে না, কিছুদিন বাড়ে আবার কমে। যদি এমন হয় তাহলে এই সম্ভবনাও মাথায় রাখা রাখতে হবে যে, ফ্যামিলির অন্যদেরও রুকইয়াহ করা দরকার কিনা। ন্যায়ের পথে আমরা একত্র না হতে পারলেও অন্যায়ের পথে কিন্তু সব শয়তান ঐক্যবদ্ধ।

রুকইয়াহ সংক্রান্ত ঘটনা পাব্লিকলি শেয়ার করা

প্রিয় ভাইয়েরা, যারা জিন-জাদুর জগৎ নিয়ে কাজ করছেন!

মনে রাখতে হবে, অদৃশ্য জগৎ সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে যা এসেছে, যেভাবে এসেছে সেটাই ১০০% সঠিক। এর বাইরে আলেমরা তাদের ইলম, উপলদ্ধি, অভিজ্ঞতার আলোকে যা বলেছেন বা লিখেছেন সেটা শতভাগ ফিক্সড নয়। আলেমভেদে ভিন্ন হতে পারে। জিন, জাদুর জগতের দিকে দৃষ্টি আকর্ষন করা উদ্দেশ্য।
কাজেই যত বড় আলেমই হোক, তার এই জগৎ সম্পর্কে কোনো কথা যখন কুরআন ও হাদিস থেকে প্রমাণিত না হবে তখন সেই কথাকে তার সাথেই সম্পর্কযুক্ত করা হবে। এমন বলা সঙ্গত হবে না, যেহেতু অমুক আলেম (অনেক বড় আলেম) এই কথা বলেছেন কাজেই এটাই ফিক্সড। বরং এটা বলা যেতে পারে যে, উনার ধারনা/মতে এটা এমন। আদতে কেমন সেটা আল্লাহই ভাল জানেন।

নানারকম রাকি

রাকির (যিনি রোগিদের রুকইয়াহ করেন) কয়েকটি প্রকারঃ

১। শুধুই রাকিঃ এরা রোগিদের কোমড় শক্ত করার ট্রাই করেন। যেন রোগি নিজেই নিজের রুকইয়াহ করতে পারে। আল্লাহ তায়লার সাথে সম্পর্ক ভাল হয়। আল্লাহ তায়লার থেকে নিজের সুস্থতা চেয়ে নিতে পারে।
২। ভারযুক্ত রাকিঃ উনারা রোগির সুস্থতার ভার নিজের কাধে নিয়ে নেন। রোগিকে সুস্থ করার জন্য যথাসম্ভব কারিশমা দেখানোর ট্রাই করেন। জ্বিন ধরে ফেলেন, ভরে ফেলেন, গেড়ে ফেলেন টাইপের কর্মকান্ড উনাদের থেকে প্রকাশ পেয়ে থাকে। রোগির তাদের কাছে যাওয়া আসার উপর থাকে।

বিয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা

ছোট করেই লিখি। বিয়ের জন্য কি কি বিষয় দেখা লাগবে সেগুলো মোটামুটি আমাদের আইডিয়া আছে। কারও না থাকলে কোনো আলেমের কাছে গেলেই বলে দিবেন ইন শা আল্লাহ।

আমি যেটা বলতে চাই তা হল, বিয়ের আগেই মেয়ের/ছেলের পরিবার কবিরাজ আসক্ত কিনা ভালমত যাচাই করে নিবেন। কিভাবে যাচাই করা যেতে পারে তার কয়েকটি টিপস দিচ্ছিঃ

একটি ভুল ধারনা: বিয়ে হলেই সমস্যা কমে যাবে

আমাদের সমাজে যেসব অদ্ভুত ধারণা প্রচলিত রয়েছে তার মধ্যে একটি হলে, বিয়ে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। ছেলে টো টো করে ঘুড়ে বেড়ায়, বিয়ে দিয়ে দাও। মেয়ের নানা ধরনের সমস্যা, বিয়ে দিয়ে দাও। কেবলমাত্র উদাহরণের জন্য লিখলাম। বাস্তবতা হয়ত আরও করুণ। 
 
গ্রুপে যেসব পোস্ট আসে ধারনা করি তার মধ্যে সর্বোচ্চ বিয়ে সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে। হাজারটা সমস্যার মধ্যে পোস্টদাত্রী বিয়ের ব্যাপারটা

যাদুর রুকইয়াহর আয়াতের তালিকা

যারা যাদুগ্রস্থ তারা এই আয়াতগুলো তেলাওয়াত করবেন। ইন শা আল্লাহ উপকারি হবে। 

 
ব্যবহারবিধিঃ
 
  • যদি আপনাকে এই পোস্টের লিংক দেয়া হয় তাহলে শুধু আয়াতগুলা তেলাওয়াত করবেন। (কোনো এডমিন যদি দেন আর কি। এই আয়াতগুলো তেলাওয়াতের পাশাপাশি অন্য যা করতে বলবে তাই করবেন।)
  • আর যদি আপনি নিজেই করতে চান এবং নিজেকে জাদুগ্রস্থ মনে করেন তাহলে এই আয়াতগুলো প্রতিদিন ১ ঘন্টা করে দুই বার পড়বেন সুবিধামত সময়ে। এরপর পানিতে ফু দিয়ে অর্ধেক পানি সকাল বিকাল খাবেন। আর বাকি অর্ধেক গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করবেন। সম্ভব হলে ৭ টা বরই পাতা বেটে গোসলের পানিতে মিশিয়ে নিবেন। যদি ঘরে সমস্যা মনে করেন তাহলে পড়া পানি ঘরেও ছিটাবেন। 
  • VVI লেখা আয়াতগুলো বেশি বেশি পড়বেন। 

অন্যের জন্য রুকইয়াহ করা প্রসঙ্গ

নিজের সমস্যার জন্য যেভাবে রুকইয়াহ করা হয় একইভাবে অন্যের সমস্যার জন্য নিজে রুকইয়াহ করা। উদাহরণ, আব্দুর রহমানকে জাদু করেছে মিনু কবিরাজ। এখন আব্দুর রহমানকে রুকইয়াহ করা সম্ভব না। আব্দুর রহমানের ঘরওয়ালী আব্দুর রহমান যেন সুস্থ হয়ে যায় তথা জাদুমুক্ত হয়ে যায় সেজন্য জাদু নষ্টের রুকইয়াহ করবে। এটাই অন্যের নিয়তে/জন্য রুকইয়াহ করা। 
 
গ্রুপে প্রায়ই পোস্ট আসে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমস্যা। এখন স্ত্রী রুকইয়াহ করবে। স্বামীকে করানো সম্ভব না। স্বামীর জন্য কিভাবে কি করা যায়? এছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যও অনেকেই পোস্ট করেন যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তিকে রুকইয়াহ করানো সম্ভব না। কোনো রাক্বীর সাহায্য নেয়ারও সুযোগ নেই। এসব ক্ষেত্রে তাহলে কি করা? এসব ক্ষেত্রেই অন্যের নিয়তে রুকইয়াহ করার ধারণা পাওয়া যায়। (তবে যারা করোলাকে না পেলে বাচবো না, পটল ছ্যাকা দিয়েছে বলে মরে যাব ধরনের রোগে ভুগছেন তাদের কথা ভিন্ন।) 

আয়াতুল হারকের আয়াতলিস্ট

আয়াতুল হারক তথা জাহান্নাম ও আযাব সংক্রান্ত আয়াতসমূহ। এইগুলো কেন পড়ে?
 
১। ওয়াসওয়সা থেকে সুস্থতা লাভের আশায়।
২। জ্বিনকে শাস্তি দেয়ার নিয়তে
৩। যাদুর জিনিস লুকানো থাকলে তা পুড়িয়ে ফেলার নিয়তে
 

Tuesday, December 29, 2020

প্রেগন্যান্ট অবস্থায় রুকইয়াহ করা যায় না?

এই কথার জবাব ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। এমনিতে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় রুকইয়াহ করা নিষেধ নয়। এমন নিষেধাজ্ঞা কেউ জারি করে নি। তবে প্রশ্নটা এমন হতে পারে, প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কি আপনি রুকইয়াহ করবেন?

এই প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করি। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় একজন মেয়ের শারিরিক, মানসিক কি কি পরিবর্তন সাধিত হয়, তার কেমন লাগে সেটা একজন মা ভাল বলতে পারবেন। আর তিনি যদি বদনজর, জিন, জাদুর সমস্যার আক্রান্ত থাকেন তাহলে তা আরও দুর্বিষহ হবার কথা।
এখন এই অবস্থায় যদি রুকইয়াহ করেন তাহলে কি হতে পারে? গা ব্যথা হতে পারে, পেট ব্যথা হতে পারে, মাথা ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে, জ্বর আসতে পারে। জিনের সমস্যার থাকলে জিন হাজির হতেও পারে, নাও হতে পারে। জিন হাজির না হলে তো কিছু বলার নেই, যদি হাজির হয় তাহলে কি হবে সেটা অগ্রিম বলা সম্ভব না।
মাথায় রাখতে হবে প্রত্যেক মানুষের সহ্য ক্ষমতা সমান না। কেউ সর্দি লাগলেই বিছানায়, আবার কেউ ১০২ ডিগ্রী জ্বর নিয়েও সব কাজ করছে। তেমনি প্রেগন্যান্ট হলেও সবার শারিরিক সক্ষমতা এক রকম না। এখন আপনার সক্ষমতা কেমন সেটা আপনি ভাল বলতে পারবেন। আমি বলতে পারবো না।
আপনি যদি ভয় পান উপরোক্ত সমস্যা হলে আপনি সামলাতে পারবেন না। তাহলে রুকইয়াহ করবেন না। আবার আপনি যদি মানসিকভাবে এমন শক্তিশালি হন যে, রুকইয়াহ করি ইন শা আল্লাহ। যা হবার হবে। আল্লাহ ভরসা। যদি বাবু নষ্টও হয়ে যায় আমি ধৈর্য্য ধরবো ইন শা আল্লাহ। আল্লাহর কাছে পুরষ্কার পাবো। কিন্তু আমার পিছনে যে শয়তান লেগেছে তার শেষ দেখে ছাড়বো।
আবার কারও কারও অনর্থকই বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। ডাক্তার কোনো কারণ খুজে পায় না। তো এসব ক্ষেত্রে ম্যাক্সিমাম লস কি? বাচ্চা আবার নষ্ট হয়ে যাবে। রুকইয়াহ করার পরেও যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলেতো সেটা আগেও হত। কাজেই এই সমস্যা থাকলে রুকইয়াহ করাই উচিত।
পাশাপাশি ডাক্তারি হেল্প নিতেও কোনো সমস্যা নেই। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় রুকইয়াহ করে সফলতার কথাও আছে, সফল হয়নি এমন কথাও আছে। এখন চেষ্টা করবেন কিনা, এই সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। আমাদের কাছে ফায়সালা চাইলে হবে না।
আপনি প্রেগন্যান্ট কিন্তু জামাই দেখতে পারে না। জামাইকে দিয়ে রুকইয়াহ করানো পসিবল না। এখন আমি যদি আপনাকে রুকইয়াহ করতে জোর করি আর আপনি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে গেলেন বা মাথা ঘুড়ে পড়ে গিয়ে আঘাত পেলেন, বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেল। তখন আমাকে দোষ দিবেন। আবার রুকইয়াহ করতে মানা করলাম, তখন জামাইয়ের সাথে সম্পর্ক চরম পর্যায়ের খারাপ হয়ে গেল, তখনও দোষ আমাকেই দিবেন। বলবেন, রুকইয়াহ পরামর্শ চেয়েছিলাম। পাই নি।
কাজেই সিদ্ধান্ত আপনার। আমরা কোনো দায় নিব না। সিদ্ধান্ত নেয়ার পর পরামর্শ দিতে পারি বড়জোর।
যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ঠ।

একটি ভুল কথাঃ রুকইয়াহ করলে ইফেক্ট হয়

 গ্রুপে এড হয়ে অনেকে যখন মেম্বারদের পোস্ট দেখেন, কমেন্টগুলো চেক করেন তখন দেখতে পান অমুক বদনজরের রুকইয়াহ করেছে, কেউ ডিটক্স করেছে, কেউ যাদু নষ্টের রুকইয়াহ করেছে। করার সময় তার অনেক ভয় লেগেছে, গায়ে অনেক ব্যথা হয়েছে, মন মেজাজ খারাপ হয়েছে, ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেছে, কেউ নিষেধ করেছে রুকইয়াহ করতে অথচ কাউকে দেখা যাচ্ছে না ইত্যাদি ইত্যাদি।

দেখে ভয়ে চুপসে যান, চিন্তিত হয়ে পড়েন। ভাবেন রুকইয়াহ করলে এমন হয়, আমি করলে আমারও হবে। কাজেই রুকইয়াহ করা যাবে না। দোষটা রুকইয়াহর ঘাড়ে এসে পড়ে। একধরনের নেগেটিভ সেন্স তৈরি হয়। অথচ বাস্তবতা মোটেও এমন না।
আপনার হাতে স্যাভলন লাগলো বা লাগালেন। জ্বলবে? যদি হাতে কাটা/আচর থাকে তাহলে জ্বলবে। যদি না থাকে জ্বলবে না। কাটা
জায়গায় স্যাভলন লাগানোর পর জ্বললে সেটা স্যাভলনের দোষ? জ্বুলুনির ভয়ে স্যাভলন লাগানো বাদ দিতে হবে?
গায়ে ফোঁড়া হয়েছে। ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার গেলে পুজ, রস বের করে ওষুধ দিলেন। ব্যথায় অনেক চিল্লাপাল্লা করলেন, কেঁদে ফেললেন। ডাক্তারের দোষ হবে? ব্যথার ভয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া কোনো বুদ্ধিমান বন্ধ করে?
যিনি সুস্থ মানুষ তিনি যদি রুকইয়াহ করেন কিছুই হবে না। তার ভাল লাগবে, সাধারন কুরআন তেলাওয়াতের মতই মনে হবে। আর যিনি অসুস্থ তার নানা ধরনের অসুবিধা অনুভব (সাময়িক) হতে পারে। সুস্থ হলে এইগুলো কিছুই থাকবে না।
তো, দোষ কি রুকইয়াহর হল? না। দোষ হলঃ
১। আপনার। আপনি আল্লাহর হুকুম ঠিকমত মানেন না। এই কারণে শয়তান আপনার ক্ষতি করেছে।
২। আপনার অভিভাবকের। আপনাকে দ্বীনের পথে অগ্রসর করে নি।
৩। দোষ আপনার শিক্ষক, ওস্তাদদের। আপনাকে সুরক্ষার আমল শেখায় নি।
৪। দোষ সমাজের। যেখানে দাড়ি শেভ করলে সবাই বাহবা দেয়, আর রাখলে টিটকিরি করে। (জাস্ট এক্সাম্পল)
৫। দোষ হাসাদগ্রস্থ অন্তরের। অন্যের ভাল যারা সহ্য করতে পারে না।
৬। দোষ জিনের। যে ইচ্ছা করে মানুষের পিছনে লাগে।
৭। দোষ যাদুকরের। যে যাদু করেছে। তার সহকারীদের। যাদুকরের কাছে যে গিয়েছে তাদের।
কাজেই রুকইয়াহ নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। রুকইয়াহ করে কারও একচুল ক্ষতি হবে না। এটা আল্লাহর কালাম দিয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। আল্লাহর সাহায্য চাইলে কারও ক্ষতি হতে পারে?
পারে না...

এত আমল করি কাজ হয় না কেন?

 [ আমার অজ্ঞতা প্রসূত কিছু ধারনা, জীবনের কিছু অভিজ্ঞতার সমষ্টি এই পোস্ট। কাজেই কোনো রেফারেন্স হবে না। যারা রেফারেন্স ছাড়া কিছু গ্রহণ করেন না, তারা এখানেই ক্ষান্ত দিতে পারেন। ]

অনেকদিন ধরে কোনো আমল করছেন বা রুকইয়াহ করছেন তাদের মধ্যে কারও কারও মনে এধরনের প্রশ্ন আসতে পারে। এই প্রশ্নের উত্তরের পালটা প্রশ্ন হল, আপনি কি করে বুঝলেন কাজ হচ্ছে না? কি প্রমাণ আছে? এই যে, সমস্যা শেষ হচ্ছে না, কাঙ্খিত বস্তু পাচ্ছি না, সুস্থ হচ্ছি না - এটাইতো প্রমাণ।
ব্যাপারটা কি সত্যিই এমন?
তর্কের খাতিরেও যদি মেনে নেই কেউ রুকইয়াহ করছে বা কোনো আমল করছে কিন্তু কোনো উপকার দৃশ্যমান হচ্ছে না তাহলে এর পিছনে কি কি বিষয় থাকতে পারেঃ
✅
আপনার ঈমানই নেই
এটা কেমন? কোনো ব্যক্তিকে ঈমানদার বলতে হলে তার কিছু মূল জিনিসের উপর দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে। যেমন, আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি মালাক বা ফেরেশতাকুল। এখন আপনি ফেরেশতায় বিশ্বাস করেন না। ঈমান আছে আপনার?
✅
ঈমান ভেঙে গিয়েছে
আপনি এমন কোনো বিশ্বাস মনে লালন করেন বা এমন কোনো কাজ করেছেন যার ফলে আপনার নাম ঈমানদারের খাতা থেকে কাটা গিয়েছে। যেমন, উঠতি বয়সি কোনো ছেলে দাড়ি রেখেছে অথবা কোনো মেয়ে নেকাব পড়া শুরু করেছে, তাই দেখে আপনি নাক সিটকালেন, জ* হয়ে গিয়েছে, লিভিং টেন্ট, তালে** হয়ে গিয়েছো। ঈমান থাকবে? আলেমদের থেকে জেনে নিবেন।
✅
আমলের উপর বিশ্বাস নেই
আমল করলে কি এটা হবে? রুকইয়াহ করলে সুস্থ হব তো নাকি? আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমল করা। হাদিসে আসছে, এই আমল করলে এই হবে। হাদিস সত্য, অবশ্যই সত্য। কাজেই আমাকে চালিয়ে যেতে হবে।
✅
নিজের উপর আত্মবিশ্বাসের অভাব
আমল করছি ঠিকমত হচ্ছে তো? নাকি কোথাও কিছু মিস গেল? এমন করেছিলাম কি? অমন করেছিলাম কি? ভুল হল নাতো? আগে কি হয়েছে না হয়েছে সেটা না ভেবে পরবর্তীতে কিভাবে আরও সুন্দর করে করা যায় সেটা ভাবতে থাকা।
✅
অমনোযোগীতা
আমল শুরু করে করে আমি দোকানের হিসাব মিলাই, বফ/গফকে কি মেসেজ দিব ইত্যাদি চিন্তা করি, কি রান্না করবো ইত্যাদি চিন্তা করি। আমল আর আমল থাকে না, অভ্যাসে পরিনত হয়। উচিত হল, সব চিন্তা সাইডে রেখে আমলে মন দেয়া, কি পড়ছি, উচ্চারন সহি করে পড়া, অর্থ মাথায় রাখায়, দিল লাগিয়ে আমল করা। যতটুকু পারা যায়। শয়তান মন ঘুড়িয়ে দিবে, আবার টেনে নিয়ে আসতে হবে।
✅
অনাগ্রহ
এই সমস্যায় ভুগেন যারা দীর্ঘদিন ধরে কোনো আমল করছেন তারা। আমল করতে করতে হাপিয়ে যান। ধূর, আর কত আমল করবো? তখন করলেও প্রথম প্রথম যেমন আগ্রহের সাথে শুরু করেছিলেন তেমন আগ্রহ আর থাকে না। অনাগ্রহের সাথে আমল করেন, আমলে “প্রাণ” থাকে না। এটা কাম্য নয়।
✅
কবীরা গুনাহ থেকে বাঁচি না
বিজ্ঞ আলেমদের মতে, সগীরা গুনাহগুলো সালাতের দ্বারা মাফ হয়ে যায়। (সালাত সালাতের মত না হলে কতটুকু মাফ হবে সেটাও বিষয়) কিন্তু কবীরা গুনাহের জন্য তওবা করা জরুরী। তওবার মানে এই না, দুইগালে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে মুখে তওবা তওবা বললাম। বরং আল্লাহর ভয়ে অন্তর থেকে অনুতপ্ত হয়ে উক্ত কাজ আর জীবনেও না করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করার নামই তওবা। আমলও করছি, গুনাহও করছি এমন যেন না হয়।
✅
সুদ থেকে বেঁচে থাকা
এই গুনাহের কথা আলাদা করে লিখা উচিত বলেই লিখলাম। এটা অতি জঘন্য পর্যায়ের গুনাহ। আল্লাহ তায়ালার পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিসই গ্রহণ করবেন। দেহের প্রতিটি রক্তকনায় বইছে সুদের দ্বারা আহরিত খাদ্যকণা। এমতাবস্থায়, সিজদা দিতে দিতে কপালে দাগ ফেলে দিলেও কোনো লাভ হবে কিনা বিজ্ঞ আলেমের সাথে পরামর্শ করে জেনে নেয়া উচিত।
✅
শরীর/ঘর শয়তানি জিনিসপত্র থেকে পবিত্র রাখা
হয়ত কারও ঘরে কুকুর আছে, আছে কোনো প্রাণীর ছবি। সেখানে রহমতের ফেরেশতা ঢুকবে না। হয়ত শরেঈ কোনো শিরক, কুফর মিশ্রিত তাবিজ-কবচ আছে। এই কারণে আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
✅
আমল পূর্ণ না হওয়া
ডাক্তার যখন প্রেস্ক্রিপশন লিখেন তখন একটা সময় লিখে দেন যে, এই ওষুধ এত দিন খাবেন, এতবার করে খাবেন। এরপর আবার আসবেন। শরীর সুস্থ না হলে পরবর্তী কথা শুনে দরকার হলে ওষুধ পরিবর্তন করে দেন বা আরও চালিয়ে যেতে পারেন। আমল, রুকইয়াহর ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে। হয়ত যতদিন আমল করলে আমি সুস্থ হব ততদিন আমল করিনি, যতবার করলে কাঙ্খিত বস্তু পাওয়া যাবে ততবার করি নি। কাজেই চালিয়ে যাওয়া, হতাশ না হওয়া।
উপরোক্ত বিষয়গুলো যদি কারও ক্ষেত্রে ঠিকও থাকে আর সে ভাবে তার কোনো কাজে আসছে না তাহলে সেটা ভুল ধারনা। আমলের ফলাফল বোধগম্য হতেই হবে এমন কোনো শর্ত আছে কি? আপনার এই অসুস্থতা/বিপদ না থাকলে আপনি হয়ত এখন যেভাবে আল্লাহকে ডাকছেন সেভাবে ডাকতেন না। আপনি হয়ত আর দশজন মানুষের মতই গাফেল থাকতেন। আপনার তো আল্লাহর শুকরিয়া করা উচিত যে, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ভালবাসেন বলেই এমন পরিস্থিতিতে ফেলেছেন যেন আপনি আল্লাহ তায়ালাকে ডাকেন। আপনি বিশ্বাস রাখেন, এই বিপদের বদলা হিসেবে আল্লাহ তায়ালা এমন পুরস্কার দিবেন যে আপনার অন্তর প্রশান্ত হয়ে যাবে।
[ নিজের কর্মফল ভোগ করাকে এই পোস্টের সাথে গুলিয়ে না ফেলি ]

হায়েজ (পিরিয়ড) অবস্থায় আমল করা প্রসঙ্গ

 ইস্তেহাযা এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় নয়। যারা জানেন না ইস্তিহাযা কি তারা জেনে নিবেন।

হায়েজ (পিরিয়ড) এবং নেফাস (সন্তান জন্ম দেবার পর যে রক্তস্রাব হয়) অবস্থায় মেয়েদের সালাত, সাওম আল্লাহ মাফ করেছেন। সালাত একেবারে মাফ হলেও, সাওম পরে আদায় করতে হয়।
এই নিষেধাজ্ঞার চক্করে পড়ে অনেকেই এই অবস্থায় একদম গাফেল হয়ে যান। হয়ত মনে করে মুখ দিয়ে "আল্লাহ" শব্দটাও এই অবস্থায় বের করা যাবে না। অলসতার কারনেই হোক বা অজ্ঞতার কারণেই হোক অনেকেই এই সময় আমলে দুর্বল হয়ে যান, করেন না বা করতে চান না। কিন্তু এটা আদৌ উচিত নয়।
পিরিয়ড হোক বা নেফাস অবস্থায় থাকেন, আপনাদের উচিত হবে আল্লাহর যিকর, দুয়া, দরূদ, ইস্তেগফার এবং কুরআনের যেসমস্ত আয়াত হেফাজতের আমল হিসেবে বা দুয়া হিসেবে পড়ার অনুমতি আছে সেগুলো পড়া। এই প্রসংগে একটি ফতোয়া দিচ্ছি।
"পিরিয়ডে এমন সব আয়াত পড়া যাবে যেসব দোয়ার অর্থ প্রকাশ করে। অথবা আল্লাহর জিকির, প্রশংসা, বড়ত্ব বুঝায়। এ অবস্থায় এমন কোন আয়াত পড়া যাবেনা যা দ্বারা আল্লাহর নির্দেশ এবং নিষেধাজ্ঞা, পূর্বের অথবা ভবিষ্যতের কোন ঘটনা অথবা ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য বুঝায়। মোটকথা, এ অবস্থায় সাধারণ তেলাওয়াতের উদ্দেশ্যে কোরআন পড়া যাবেনা।
উল্লেখিত মূলনীতি অনুসারে, আপনি যদি নিয়ত রাখেন আল্লাহর প্রশংসাপূর্ণ আয়াতের মাধ্যমে জিন এবং শয়তানের ক্ষতি থেকে সুরক্ষার জন্য পিরিয়ডের সময় ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি, তিনকুল (সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস) পড়বেন, তাহলে দোয়া হিসেবে এটা পড়া যাবে। তবে আপনি সুরা কাফিরুন পড়তে পারবেন না কারণ এটা উপরের উল্লেখিত শর্ত পূরণ করে না।
আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন।
দারুল ইফতা
দারুল উলুম দেওবন্দ
(Fatwa: 212/227/N=1433)"

তাহলে বোঝা গেল, কুরআনুল কারীমে যেসব দুয়ার আয়াত আছে, যেসব আয়াতে আল্লাহর বড়ত্ব, প্রশংসা, জিকির ইত্যাদি আয়াত আপনি নিজের সুরক্ষার জন্য, শয়তান থেকে হেফাজতের জন্য পড়তে পারবেন।
কেউ কেউ একধাপ এগিয়ে গিয়ে এই কথাও বলেন, পিরিয়ড/নেফাসের সময়টাতে মেয়েরা প্রতি সালাতের ওয়াক্তে কিছু না কিছু জিকির, দুয়া করবে, গাফেল হবে না। [ এটা বাধ্যতামূলক না, গুরুত্ব বোঝানোর জন্য লিখলাম ]
আর নিজেকে সব ধরনের ক্ষতি থেকে হেফাজতে রাখতে এই আমলগুলো খুবই জরুরী।

আল্লাহ তায়ালা সহজ করে দিন, কবুল করে নিন। তৌফিক দান করুন। আমীন।

রুকইয়াহর নিয়ম কানুন কি খুবই স্ট্রিক্ট

রুকইয়াহর নিয়ম কানুন কি খুবই স্ট্রিক্ট? যা বলা হয় তাই পয়েন্ট টু পয়েন্ট ফলো করা লাগে?

জ্বি না, আদতে ব্যাপারটা তা না। কবিরাজি আর রুকইয়াহর মধ্যে একটি বিশেষ পার্থক্য হল, কবিরাজিতে ফ্লেক্সিবিলিটি নেই যা রুকইয়াহতে আছে। কবিরাজিতে কবিরাজ আপনাকে অদ্ভুত সব শর্ত দিবে আর আপনাকে সেভাবেই ফলো করতে হবে। যদি বলে শনিবারে যেতে হবে তাহলে শনিবারেই যেতে হবে। শুক্রবার বা রবিবারে গেলে হবে না। কিন্তু রুকইয়াহর ক্ষেত্রে বিষয়গুলো এমন না। রুকইয়াহর জন্য কোনো শনি, রবিবার বা বিশেষ কোনো দিন নেই। যেকোনো দিন আপনার সুবিধামত সময়ে শুরু করতে পারবেন।
তবে অসুস্থদের সুবিধা বা আরামের কথা চিন্তা করে আমরা মাঝে মাঝে কিছু কথা বলি। যেমন, গোসলের আগে কুরআন তেলাওয়াত, অডিও শুনতে বলি। কারণ, তেলাওয়াত করলে, অডিও শুনলে অনেক সময় শরীর খারাপ লাগে, অস্বস্তি লাগে, জায়গায় জায়গায় ব্যথা হতে পারে ইত্যাদি। তখন গোসল করলে আরাম লাগে। মনে রাখতে হবে, তেলাওয়াত করার পর বা অডিও শোনার পর গোসল করা বাধ্যতামূলক নয়। গোসল করতে না পারলে পড়া পানি খান, অযু করে নিন। তাতেও ইন শা আল্লাহ খারাপ লাগা কমবে।
আবার ডিটক্সের পোস্টে লেখা সকালে উঠে গোসলের কথা। তাহলে কি ফজরের নামাযের আগেই গোসল করতে হবে? না, আপনার সুবিধামত করতে পারবেন। দুপুরে করলেও কোনো সমস্যা নেই। করলেই হল।
ফ্লেক্সিবিলিটি আছে। কাজেই এমন মনে করার কোনো কারণ নেই যে, সকালের গোসল দুপুরে করলে রুকইয়াহ হবে না। আবার প্রথম থেকে করা লাগবে। আগের গুলা সব বাতিল হয়ে যাবে না। নিশ্চিন্তে চালিয়ে যান ইন শা আল্লাহ।
রুকইয়াহ একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা, কোনো শিকল নয় যা আপনাকে পেচিয়ে ধরে আটকে রাখবে।