কোন মানুষকে কেন জিন আসর করে তা আগেই আলোচনা করা হয়েছে। জিনের আসর দুই ধরনের হতে পারে।
- আংশিক আসর
- পূর্ণ আসর
আংশিক আসরের ক্ষেত্রে জিন রোগীর কোন অঙ্গে ঢুকে পড়ে। ফলশ্রুতিতে সেই অঙ্গে ব্যথা হয়, ধীরে ধীরে অঙ্গ তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আর যখন পূর্ণরূপে আসর করে তখন জিন মানুষের মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এতে করে সারা শরীরের উপর জিনের দখল হয়ে যায় এবং জিন যেভাবে খুশি সেভাবে রোগীকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের সমাজে এই ধরনের রোগীকেই আমরা জিনে আসর করা রোগী বলে থাকি।
পূর্ণ আসর হলেতো আর লক্ষন দেখার কিছু নেই। বোঝাই যায় জিনে আসর করেছে। তবে আংশিকভাবে আসর করেছে কিনা বোঝার জন্য নিচের লক্ষনগুলো পর্যালোচনা করা উচিত। জিনের আসরের লক্ষনগুলোকে আমি তিনভাবে সাজিয়েছি।
১। ইবাদতে অনীহা। আল্লাহ তায়ালার যিকর, সালাত, কুরআন তেলাওয়াত করে ইচ্ছা না করা / করতে না পারা।
২। আবোল তাবোল কথা বলা, উলটা পালটা কাজ করা, অদ্ভূত অঙ্গভঙ্গি করা - যা আগে ছিল না।
৩। শরিরের কোন অঙ্গ অবশ হয়ে যাবার মত অনুভূতি হওয়া। (ডাক্তারি কোন কারণ ছাড়াই)
৪। মৃগীরোগ (ডাক্তারী কোন কারণ ছাড়াই)
৫। কোন কারন ছাড়াই কান্নাকাটি করা
৬। অযথাট হুট করে প্রচন্ড রেগে যাওয়া, রেগে গেলে শরীরে অস্বাভাবিক শক্তি চলে আসা।
৭। টয়লেটে প্রচুর সময় ব্যয় করা যেন ওখানে থাকতেই ভাল লাগে। একা একা বাথরুমে কথা বলা।
৮। ডাক্তারী কোন কারণ ছাড়াই দীর্ঘ মাথাব্যথা থাকা। পেইনকিলার খেয়েও তেমন লাভ না হওয়া।
৯। অলস ও প্রচন্ড অধৈর্য হয়ে যাওয়া
১০। কোন অঙ্গে ব্যথা হওয়া যা চিকিৎসায় ভাল হয় না।
১১। অপরিচিত কোন ভাষায় কথা বলা
১২। গলার স্বরে পরিবর্তন। বাচ্চা বুড়োদের মত, মেয়ে মানুষ ছেলেদের মত গলায় কথা বলা। উল্টোটাও হতে পারে।
যখন রোগী ঘুমিয়ে থাকেঃ
১। ঘুমের ঘোরে চিৎকার করা, হাসা, কাঁদা, গোঙানো।
২। ঘুমের মধ্যে দাঁত কিটমিট করা
৪। ঘুমের ঘোরে হাটাচলা করা (Sleep Walking)
৫। ঘুমের মধ্যে কথা বলা, ঝগড়া-ঝাটি করা।
৬। ঘুমাতে সময় লাগা। অনেকে সময় ধরে বিছানায় এপাশ ওপাশ করার পর ঘুমাতে পারা।
৭। উদ্বেগ, দুঃশ্চিন্তায় ঘুমাতে না পারা। অথচ এমন হবার কোন কারন নেই।
৮। ঘুম থেকে উঠার পর শরীরের কোন স্থানে আচরের দাগ দেখতে পাওয়া।
রোগী যখন স্বপ্ন দেখেঃ
১। ভয়াবহ সব স্বপ্ন নিয়মিত দেখা। স্বপ্ন একেবারে বাস্তবের মত অনুভূত হতে পারে।
২। স্বপ্নে নিজেকে উপর থেকে পড়ে যেতে দেখা বা উপর থেকে লাফ দিতে দেখা।
৩। ঘন ঘন যৌন স্বপ্ন দেখা যেমন কারো সাথে সেক্স করা বা কেউ সেক্স করে চায় এমনটা দেখা।
৪। কেউ স্বপ্নে ভয়ভীতি দেখায়, হুমকি দেয়।
৫। অদ্ভূত আকৃতির মানুষ দেখা। যেমন, খুব লম্বা, অত্যধিক খাটো, কুচকুচে কালো মানুষ দেখা।
৬। স্বপ্নে বিভিন্ন প্রাণি নিয়মিত দেখা। যেমনঃ কুকুর, সাপ, বিড়াল, উট, সিংহ, বাঘ, গরু/ষাড়, শিয়াল, ইদুর ইত্যাদি। এদের আক্রমন করতে দেখা।
৭। স্বপ্নে কবরস্থান, জনমানবশূন্য জায়গা, মরুভুমি ইত্যাদি দেখা।
৮। স্বপ্নে জিন-ভূত দেখা।
জিনের রোগীর সাধরনণত এই ধরনের সমস্যাগুলো থেকে থাকে। সত্যিকার জিনের রোগীর এখান থেকে অনেকগুলো লক্ষণ মিলতে পারে। তবে যাদের দুই একটা মিলবে বা খুব বেশি মিলবে না তাদের ঘাবড়ানোর কারণ নেই ইন শা আল্লাহ। বদনজর বা অন্য কোন কারনেও কিছু লক্ষণ মিলতে পারে। ফরজ আমল ও সুরক্ষার আমলে মনোযোগ দিলে ইন শা আল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে।
আগামিদিন ইন শা আল্লাহ জিনে ধরা রোগির চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করব। আজকে আল্লাহ হাফেজ।