- আপনি কি রিজিক নিয়ে পরিশ্রান্ত? চাকুরী, ব্যবসা নিয়ে চিন্তিত?
- বহু চেষ্টা করেও কি আপনার বিবাহ হচ্ছে না?
- বাবু নিতে চান কিন্তু বাবু হচ্ছে না?
- আপনি কি হতাশা, পেরেশানী, একাকিত্ব ভুগছেন?
মানবজীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো শুধু মাত্র একটি আমল করেই যদি উপকার পেতে চান তাহলে বলব ইস্তেগফারকে ভালবাসুন।
আল্লাহ তা'য়ালার বানীঃ তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি তো মহাক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, তিনি তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবন তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা। [সূরা নূহ, আয়াত ১০ থেকে ১২]
<>একবার হাসান বসরী রাহ. এর কাছে এক ব্যক্তি জানালো “ আমার ফসলে খরা লেগেছে। আমাকে আমল দিন” হাসান বসরী তাকে বললেন এস্তেগফার করো। কিছুক্ষণ পর আরেক ব্যক্তি এসে অভিযোগ পেশ করল “আমি গরীব। আমাকে রিজক এর আমল দিন” হাসান রহ. তাকেও বলেলন এস্তেগফার করো। এমনিভাবে অপর এক ব্যক্তি এসে সন্তান হও্য়ার আমল চাইলে তিনি বললেন, এস্তেগফার করো।” উপস্থিত ছাত্ররা জিজ্ঞেস করল, “সবাইকে এক পরামর্শই দিলেন যে?” বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রহ. বললেন “আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই বলি নি। এটা বরং আল্লাহ তায়ালা তার কুরআনে শিখিয়েছেন । তারপর তিনি সুরা নুহ এর আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। (তাফসীরে কুরতুবী ১৮/৩০৩)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায় ইস্তেগফারের মাধ্যমে ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততির ব্যবস্থা আল্লাহ তা'য়ালা করে দিবেন। আর যেহেতু বিয়ের মাধ্যমে সন্তান লাভ করা সম্ভব তাই বিয়ের ব্যবস্থাও আল্লাহ তা'য়ালাই করে দিবেন।
যারা পেরেশানি, হতাশা, ডিপ্রেশন, sadness, loneliness ইত্যাদি নানা সমস্যার সম্মুখীন, তারা এস্তেগফারকে ‘লাযেম’ করে নিন। লাযেম মানে হচ্ছে, আপনি দিনে রাতে যথাসম্ভব এস্তেগফারকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নিন। উঠতে বসতে এস্তেগফার করতে থাকুন। আল্লাহ তায়ালা সকল পেরেশানি ও মানসিক কষ্ট দূর করে দিবেন ইনশা আল্লাহ।
হাদিসে এসেছে, ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা। বলেন “যে ব্যক্তি নিজের জন্যে এস্তেগফারকে লাযেম করে নিল, আল্লাহ তায়ালা তাকে যে কোন সংকটে পথ দেখাবেন। যে কোন ধরনের পেরেশানী ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবেন। এবং তাকে এমন উতস থেকে রিযিক দান করবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।<>
[এই অংশটুকু আব্দুল্লাহ আলমাহমুদ হুজুরের নোট থেকে নেয়া হল]
এখন প্রশ্ন এটাই যে, কিভাবে ইস্তেগফার করব? কোন ইস্তেগফার পড়ব?
আবু মা'মার (রঃ) ... শাদ্দাদ ইব্ন উস (রা) থেকে বর্নিত। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেন, সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার হল বান্দার এ দু'আ পড়া -
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لّا إِلَهَ إِلَّا أَنْت، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْت،
أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْت، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَعَلَيَّ، وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِر لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ
الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
যার অর্থঃ "হে আল্লাহ তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো, আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছো তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।"
![]() |
সাইয়্যেদুল ইস্তিগফারের ছবি |
যে ব্যক্তি দিনের (সকাল) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ ইস্তিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হয়ার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতের (প্রথম) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ দু'আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হওয়ার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতী হবে।
[সহীহ বোখারী, ইসলামী ফাউন্ডেশন, নবম খণ্ড, হাদীস নং ৫৮৬৭। আরবীটা নেট থেকে নেয়া হয়েছে। ছবি যুক্ত করে দিলাম পোস্টের সাথে।]
এছাড়াও আরও অনেক ইস্তেগফার রয়েছে। যেমনঃ
১।
"رب اغفر لي، وتب على إنك أنت التواب الرحيم"
Rabb- ighfir li, wa tubb 'alayya, innaka Antat-Tawwabur-Rahim
[Sunnah,com reference : Book 20, Hadith 4]
২।
أستغفر الله الذي لا إله إلا هو الحي القيوم وأتوب إليه
Astaghfir ullah-alladhi la ilaha illa Huwal-Haiyul-Qayyumu, wa atubu ilaihi
[Sunnah,com reference : Book 20, Hadith 6]
এখন প্রশ্ন হল, ইস্তেগফার কতবার পড়ব?
হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারেরও বেশি ইস্তিগফার ও তওবা করবেন।
[সহীহ বোখারী, ইসলামী ফাউন্ডেশন, নবম খণ্ড, হাদীস নং ৫৮৬৮]
অন্য হাদিসে ১০০ বারের কথা বলা আছে।
[Sunnah,com reference : Book 20, Hadith 1]
কাজেই আমরা প্রতিদিন ৭০ এর বেশি পড়ব। ১০০ বার পড়লে খুবই ভাল। আরও বেশি পড়তেও অসুবিধা নেই। একান্ত অপারগ হলে যা পারি তাই পড়ব। ইনশা আল্লাহ তাতেও উপকার বঞ্চিত হব না।
আল্লাহই ভাল জানেন।