অমুসলিম হলে কি রুকইয়াহ করতে পারবে? কিভাবে করবে?

জ্বি, রুকইয়াহ সবাই করতে পারবে। মুসলিম/অমুসলিম কোনো ভেদাভেদ নেই এখানে। মুসলিমরা যেভাবে রুকইয়াহ করে, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-অন্যরাও সেভাবেই কর...

Search This Blog

Sunday, April 14, 2019

পবিত্রতা অর্জন ও রুকইয়াহ

গ্রুপে কাজ করতে যেয়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হল, অনেকেই আছেন যারা পবিত্রতা অর্জন নিয়ে অবহেলা করেন। বিশেষ করে যারা জ্বিনের দ্বারা সমস্যা আক্রান্ত। আবার কেউ কেউ আছেন পবিত্রতা অর্জন নিয়ে বাড়াবাড়িতে আক্রান্ত। মানে অযু করতে গিয়েছেন, অযু করা আর শেষ হয় না। এটা অন্য প্রসঙ্গ।

পবিত্রতা নিয়ে অবহেলা করলে রুকইয়াহ করলে যথাযথ ফলাফল পাওয়া যায় না। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র, তিনি পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন। এখন প্রশ্ন হল, কি কি বিষয় পবিত্রতা অর্জনের মধ্যে পড়ে, কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। তাহারাত বা পবিত্রতা দুই ধরনেরঃ শারিরিক ও আত্মিক। শারিরিক পবিত্রতার বিষয়ে কিছু লিখি আজ।

📌 মুহাম্মদ ইব্‌ন আব্দুল্লাহ্‌ ইব্‌ন ইয়াযীদ (রঃ)---- আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচটি বিষয় মানুষের ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত। খাতনা করা, নাভীর নিম্নাংশের লোম চেঁছে ফেলা, বগলের পশন উপড়ে ফেলা, নখ কাটা এবং গোঁফ ছাঁটা ।


[সুনানু নাসাঈ শরীফ। ইফাঃ ১/১১]

কাজেই বোঝা গেল এই পাঁচট বিষয় খেয়াল করতে হবে। প্রথমটা ছাড়া বাকিগুলোর ব্যাপারে কি হুকুম? কতদিন পর পর পরিচ্ছন্ন হতে হবে? একই গ্রন্থ থেকেঃ

📌কুতায়বা (রঃ) ---- আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জন্য গোঁফ ছাঁটা, নখ কাটা, নাভীর নিম্নভাগের লোম চেঁছে ফেলার ও বগলের পশম উপড়ে ফেলার মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন যে, আমরা যেন এ কাজগুলো চল্লিশ দিনের বেশি সময় পর্যন্ত ফেলে না রাখি। রাবী বলেন আরেকবার চল্লিশ রাতের কথাও বলেছেন।

[সুনানু নাসাঈ শরীফ। ইফা ১/১৪]

সুতরাং বোঝা গেল, প্রতি ৪০ দিনে একবার এসব কাজ করা জরুরী। নাহলে শরীর পবিত্র থাকল না। এরপর আসে ফরয গোসলের বিষয়। সংক্ষেপে লেখার ট্রাই করি।

📣যেসব কারনে গোসল ফরয হয়ঃ

১। যদি উত্তেজনার সাথে বীর্য (মনি) বের হয়।
২। নারী-পুরুষ মিলিত হলে ।
৩। মেয়েদের পিরিয়ড শেষ হলে পবিত্রতা অর্জনের জন্য ।
৪। বাচ্চা প্রসবের পর রক্তপাত বন্ধ হলে পবিত্রতা অর্জনের জন্য ।
৫। কোন মুসলমানের লাশকে গোসল করানো বাকি মুসলমানদের উপর ফরযে কেফায়া। অর্থাৎ কেউ একজন করালে সবাই দায় মুক্ত হবে। আর কেউ না করলে সবাই দোষী হবে।

কিভাবে ফরয গোসল করবেন? গোসলের ফরজ তিনটিঃ

১। কুলি করা। রোযাদের না হলে গড়গড়ার সাথে কুলি করা।
২। নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌছান।
৩। ভালভাবে সারা শরীর ধুয়ে ফেলা।

বিস্তারিত জানতে মাওলানা মুহাম্মদ হেমাএত উদ্দীনের আহকামে যিন্দেগী দেখা যেতে পারে।

📣গোসলের মাধ্যমে তো ফরয গোসলের প্রয়োজন মিটলো। কিন্তু যদি যদি গোসল ফরজ না হয়ে থাকে তাহলে পবিত্রতা অর্জনের জন্য অযু করতে হবে। অযুর ফরজ ৪ টিঃ

১। একবার সমস্ত মুখ ধোয়া। কপালের উপরিভাগের চুলের গোড়া থেকে চিবুক (থুতনি) পর্যন্ত এবং দুই কানের লতি পর্যন্ত হল মুখমন্ডলের সীমানা।
২। একবার দুই হাত কনুইসহ ধৌত করা ফরয।
৩। একবার মাথার চার ভাগের একভাগ মাসেহ করা ফরয।
৪। একবার দুই পায়ের পাতা গোড়ালী পর্যন্ত ধৌত করা

নামায, কুরআন তেলাওয়াত/স্পর্শের জন্য অযু জরুরী। এছাড়াও অন্যান্য নফল ইবাদতের জন্য অযু থাকলে ভাল। আজকে একটা হাদিস পড়লাম যেখানে বলা হয়েছে কেউ অযু অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে শহীদি মর্যাদা পাবে। (হাদিসের মান সম্পর্কে বলতে পারলাম না) কাজেই অযু অবস্থায় থাকার গুরুত্ব অনেক। তবে অনেক সময় পুরো অযুর করা সম্ভব না হলে যেমন এমনিতে অযু করতে, শীতের সময় অযু করতে, নামাযের সময় অল্প বাকি আছে - এমন সময় অযুর ফরজগুলো করলেই অযু হয়ে যাবে। এছাড়া বাকি সময় গুরত্ব দিয়ে অযু করা উচিত। অযুর ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মোস্তাহাব সব মেনে।

বিস্তারিত জানতে মাওলানা মুহাম্মদ হেমাএত উদ্দীনের আহকামে যিন্দেগী দেখা যেতে পারে।

📣আচ্ছা যদি অযুর ব্যবস্থা না থাকে? পানি নেই, কিভাবে অযু করবেন? তখন অযুর না, তায়াম্মুম করবেন। তায়াম্মুমের তিন ফরজঃ

১। নিয়ত করা
২। মুখমন্ডল মাসেহ করা
৩। দুই হাত কুনই পর্যন্ত মাসেহ করা

তায়াম্মুমের সিস্টেম বোঝার জন্য বিজ্ঞ কারও কাছে যাওয়া দরকার। তিনি ভাল করে দেখিয়ে দিবেন। বই পড়ে সব কিছু ভাল বোঝা যায় না। আহকামে যিন্দেগীতে পদ্ধতির বর্ণনা আছে।

রুকইয়াহ করছেন অনেকদিন। কাঙ্খিত ফল লাভ হচ্ছে না। তখন পবিত্রতার দিকে খেয়াল করা উচিত। ভালভাবে পাক-সাফ হয়ে আবার রুকইয়াহ শুরু করা উচিত। ইনশাআল্লাহ বেটার রেজাল্ট পাওয়া যাবে।

বিঃদ্রঃ শুধু রুকইয়াহ নয়, সকল ইবাদতের জন্যই পবিত্রতা অর্জন একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়।