এখন কথা হল, জিন কি মানুষকে আসলেই সমস্যা ফেলতে পারে? উত্তর হল, পারে। হাদিস গ্রন্থ সমূহের চিকিৎসা অধ্যায়গুলো একটু ঘেটে দেখলে আমরা দেখতে পাব, রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম নিজেও জিনে ধরা রোগীর চিকিৎসা করেছেন। এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না। যারা আগ্রহী তারা একটু খুজে নিবেন প্লীজ।
জিনজাতি সম্পর্কে সাধারন কিছু কথা ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি। এবার জিনেরা মানুষদেরকে কি ধরনের সমস্যার ফেলে সে সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা যাক। জিনেরা মানুষকে যেসব সমস্যায় ফেলে তার মধ্যে সুপরিচিতগুলো হলঃ
জিনজাতি সম্পর্কে সাধারন কিছু কথা ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি। এবার জিনেরা মানুষদেরকে কি ধরনের সমস্যার ফেলে সে সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা যাক। জিনেরা মানুষকে যেসব সমস্যায় ফেলে তার মধ্যে সুপরিচিতগুলো হলঃ
- জিনের বদনজর / বাতাস লাগা
- জিনের আসর
- কুমন্ত্রনা বা ওয়াসওয়াসা
- যৌন নির্যাতন
এধরনের সমস্যার আক্রান্ত হলে কিভাবে চিকিৎসা করতে হবে সে সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে জিন কেন মানুষকে আক্রমন করে তা জানা জরুরী যেন আমরা জিনের আক্রমন থেকে বাচতে পারি। কথায় কাছে Prevention is better than cure!
- অনেক সময় জিনেরা প্রতিশোধ নিতে মানুষকে আক্রমন করে। বিশেষ করে কেউ যদি কোন জিনের উপর গরম পানি ফেলে তাহলে সে অথবা তার পরিবারস্থ কেউ প্রতিশোধ নিতে আক্রমন করতে পারে। গরম পানি ঢালার দ্বারা জিনের ক্ষতি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। এজন্য কোথাও গরম পানি ফেলার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা উচিত। বিসমিল্লাহ জিনদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করে। তারা সতর্ক হয় এবং জিনের ক্ষতি থেকে আদম সন্তান আল্লাহর ইচ্ছায় রক্ষা পায়।
- যেখানে সেখানে প্রস্রাব করা। বিশেষ করে মানুষের চলাচল নেই এমন স্থানে। বন-জঙ্গলে কোথাও ঘুড়তে গেলাম, প্রাকৃতিক প্রয়োজনে কিছু না ভেবেই বসে পড়লাম, কোন গুহায় গিয়ে ঢুকলাম। হাদিসে গর্তে প্রস্রাব করতে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেদিকে তোয়াক্কা করলাম না। হয়ত এই ধরনের গুহা, গর্ত জিনের বাসস্থান। বাসস্থান কেউ নোংরা করুক তা কেউ চাইবে না। তাহলে কি চেপে রাখতে হবে? না, প্রয়োজন সারার পূর্বে দুআ' পড়তে হবে। দুআ' জানা না থাকলে কমপক্ষে বিসমিল্লাহ বলা।
- জিনেরা সাপ, বিচ্ছু, উট, গরু, মহিষ, ভেড়া, ঘোড়া, খচ্চর, গাধা, পাখি, কুকুর (বিশেষ করে কালো প্রানী)র রূপ ধরে থাকতে পছন্দ করে। কাজেই অযথা এসব প্রানি হত্যা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষ করে রাতের বেলা হত্যা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় তার পরিবারস্থ জিন আক্রমন করতে পারে।
- অযথা বাড়াবাড়ি করা। জিন দেখার জন্য উঠে পড়ে লাগা, জিনদের সম্পর্কে বাহাদুরি দেখানো। "কোথায় জিন?", "যত্তসব ভুয়া", "সামনে আয় দেখিয়ে দিব", "পারলে আমাকে ভর করে দেখা" - এসব কথা বলে জিনকে উস্কে দেয়া। বাথরুমে যেয়ে উচ্চস্বরে গান গাওয়া, চিৎকার করা, বিলাপ করা, কুরআন তেলাওয়াত করলেও জিন আক্রমন করতে পারে।
- হুট করে উচু স্থান থেকে লাফ দিলে যদি নিচে কোন জিন থাকে তাহলে চাপা পড়ে মারা যেতে পারে বা আঘাত পেতে পারে। এতে করে তার পরিবারস্থ কেউ আক্রমণ করতে পারে। তাই উপর থেকে লাফ দেবার আগে বিসমিল্লাহ বলতে হবে। একই ভাবে ইট-পাথর ছোড়াছুড়ি করার পূর্বে, বালাই নাশক তথা পোকা-মাকড় ধ্বংসের ঔষুধ প্রয়োগের (বিশেষ করে ঘরে) আগে বিসমিল্লাহ বলতে হবে।
- যাদুর বইপত্র পড়ে জিনকে আহবান করে জিন আসর করতে পারে। Wiza Board ব্যবহারও জিন আক্রমনের কারন হতে পারে।
- পরিবারের কেউ যদি হঠাৎ করে ইবাদাতমুখী হয়ে যায়, হালাল-হারাম মেনে চলে, যিকর আসগার বেশি করে করে তবে শয়তান তাকে আক্রমন করতে পারে না। তখন ঐ ব্যক্তিকে দিকভ্রান্ত করতে শয়তান পরিবারের অন্য কাউকে আক্রমন করতে পারে।
- আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় না থাকলেও শয়তান আক্রমন করতে পারে। প্রতিদিন আমল করেন, একদিন অবহেলাবশত করেন নি। শয়তান সুযোগ পেয়ে গেল। আমাদের বোঝা দরকার যে, শয়তানও সুযোগ খোজে, পরিকল্পনা করে মানব সন্তানকে আক্রমন করার। তাদেরও বুদ্ধি-বিবেক রয়েছে। কাজেই তাদেরকে কোন প্রকার সুযোগ দেয়া যাবে না। ফরজ ও সুরক্ষার আমলে পাবন্দি করতে হবে।
- বখাটে জিনরা বিরক্ত করার জন্য আক্রমন করতে পারে। প্রেমে পড়ে গেল আক্রমন করতে পারে। যৌন চাহিদা থেকেও আক্রমন করতে পারে।
- কোন যাদুকর যখন জিনকে পাঠায় তখন সুযোগ পেলে জিন টার্গেট করা ব্যক্তিকে আক্রমন করতে পারে।
- বদনজরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে জিন আক্রমন করতে পারে।
- এমন কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া যা শরীয়ত অনুমোদন দেয় না। এসব অনুষ্ঠানে শয়তান উপস্থিত থাকে। এভাবে শয়তানের টার্গেট হবার সুযোগ তৈরি হয়। যেমন, বিভিন্ন পার্টি, অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব, কনসার্ট ইত্যাদি। দুঃখের বিষয় বর্তমানে মুসলমানদের বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানও এই পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।
এসব বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে ইন শা আল্লাহ জিনের আক্রমন তথা ক্ষতি থেকে হেফাজতে থাকা যাবে।