প্রিয় ভাইয়েরা, যারা জিন-জাদুর জগৎ নিয়ে কাজ করছেন!
মনে রাখতে হবে, অদৃশ্য জগৎ সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে যা এসেছে, যেভাবে এসেছে সেটাই ১০০% সঠিক। এর বাইরে আলেমরা তাদের ইলম, উপলদ্ধি, অভিজ্ঞতার আলোকে যা বলেছেন বা লিখেছেন সেটা শতভাগ ফিক্সড নয়। আলেমভেদে ভিন্ন হতে পারে। জিন, জাদুর জগতের দিকে দৃষ্টি আকর্ষন করা উদ্দেশ্য।
কাজেই যত বড় আলেমই হোক, তার এই জগৎ সম্পর্কে কোনো কথা যখন কুরআন ও হাদিস থেকে প্রমাণিত না হবে তখন সেই কথাকে তার সাথেই সম্পর্কযুক্ত করা হবে। এমন বলা সঙ্গত হবে না, যেহেতু অমুক আলেম (অনেক বড় আলেম) এই কথা বলেছেন কাজেই এটাই ফিক্সড। বরং এটা বলা যেতে পারে যে, উনার ধারনা/মতে এটা এমন। আদতে কেমন সেটা আল্লাহই ভাল জানেন।
উদাহরণস্বরুপ, যদি হাদিসে বলা হয় শয়তানের শিং আছে তাহলে আমরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করবো শয়তানের শিং আছে। এখন কোনো আলেম বললেন, শয়তানের শিং দুইটা। তাহলে আমরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করবো না যতক্ষন পর্যন্ত না তিনি তার কথার স্বপক্ষে কুরআন-হাদিস থেকে কোনো দলিল পেশ করেন।
আলেমের কথা যদি সত্যও হয় তাহলেও এই কথা বলা সঙ্গত হবে না যে, সব শয়তানেরই দুইটা শিং থাকবে। কারও একটা বা তিনটা থাকতে পারবে না। প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে আসা যাবে না।
সবচে' ভাল হয়, আম জনতা হিসেবে এসব ব্যাপারে আমাদের মাথা না ঘামানো। কোন আলেম কোন উসুলের ভিত্তিতে কি বলেছেন সেটা না জেনে, না বুঝে আমি যদি কোন ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে পৌছাই তাহলে সেটা ভুল হতে পারে। এতে যারা আমার অডিয়েন্স তারা বিভ্রান্ত হবে।
প্রথম কথাটা কি বোঝাতে পেরেছি? এবার আরেকটি কথায় আসি।
সঠিক হলেও সব কথা সবার জন্য নয়। সব টপিক সবার জন্য নয়। আর যদি সেই টপিক সত্য না মিথ্যে এটা নিয়ে কোনোরূপ দোটানা থাকে তাহলে তো আরও সতর্ক হতে হবে, তাই না?
ক্লাস ফোরের ছাত্রদের মজলিসে যদি আমি ক্লাস টেনের আলোচনা করি তাহলে সেটা সঠিক হবে? বরং উচিত হল, যেখানে যে কথা বললে সবার ফায়দা, সেটাই বলা।
কিছুদিন আগে একটা পোস্ট চোখে পড়লো। জিন, জাদু এবং এসব সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের সম্পর্কে। পড়ে যথেষ্ঠ বিরক্ত হয়েছি। মনে হচ্ছিল নতুন ধারার চটির আগমণ ঘটতে যাচ্ছে বাংলা সাহিত্যে। সেটা হচ্ছে মানুষ ও জিনকে মিলিয়ে চটি।
আচ্ছা ভাই, সেই পোস্টে যেসব কথা লিখেছেন সেগুলো কি প্রমাণিত সত্য? কুরআন হাদিসের আলোকে অকাট্যভাবে প্রমাণ করতে পারবেন? তর্কের খাতিরে যদি প্রমাণ করা সম্ভবও হয় তাহলে প্রশ্ন উঠে, ফেসবুকের মত পাব্লিক প্লেসে এসব আলোচনা করাটা কতটুকু প্রয়োজনীয় এবং যৌক্তিক? এইগুলো কি সবার জানার দরকার আছে? সবাই এসব হজম করতে পারবে তো? নাকি বিভ্রান্ত হবে? বিভ্রান্ত হলে সেই দায় কে নিবে?
আর যদি প্রমাণ করা সম্ভবই না হয় সেক্ষেত্রে কি হবে?
যদি এখনো বুঝে না আসে কি ক্ষতি হয়েছে তাহলে আরেকটু বলি।
১। ঐ পোস্ট পড়ে অমুককে নিয়ে তার বন্ধু-বান্ধবরা হাসাহাসি করে কারণ একসময় সে বলেছিল তার এই ঐ সমস্যা হয়। (আবার বলবেন না সে বন্ধুদের সাথে কেন শেয়ার করলো)
২। কারও বউ পরকীয়া করলেও তার গায়ে লাগে না, আবার কেউ অন্যের মুখে "তোমার বউ" এই কথাটাও সহ্য করতে পারে না। এখন ঐ পোস্ট পড়ার পর কেউ যদি মনে করে তার স্ত্রীর সাথে এই হয়েছে, ঐ হয়েছে এবং এটা নিয়ে সে একধরনের ঘৃণা বোধ করে এবং "তুমিই খারাপ, তোমারই সমস্যা আছে, নাহলে কারও হয় না, তোমার কেন হয়?" টাইপের অশান্তি সৃষ্টি হয় তাহলে কি হবে? এই অশান্তি যে বিচ্ছেদ পর্যন্ত যাবে না এই নিশ্চয়তা কে দিবে? (আবার বলবেন না স্বামীর সাথে কেন সমস্যা শেয়ার করলো?)
আমরা কি সর্বনাশ করছি বা করতে যাচ্ছি বুঝতে পারছি কি? অথচ আমাদের দায়িত্ব হল, মানুষকে সচেতন করা। কি কি প্রবলেম হলে কিভাবে চিকিৎসা করা উচিত সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা।
এখন এই কথা বলার সুযোগ নেই, সমস্যার আলোচনা না করেই কিভাবে সমাধানের আলোচনা করবো?
আমাদের যদি জানা না থাকে এসব আলোচনা না করে কিভাবে পরামর্শ দেয়া যায় তাহলে চুপ থাকা উচিত। আরও শেখা উচিত। যতক্ষন না সেই লেখনি হাসিল হবে।
আর যদি লজ্জাশরম বিসর্জন দিয়ে থাকি তাহলে যা খুশি তাই করতে আমাদের কোনো বাধা নেই।