অমুসলিম হলে কি রুকইয়াহ করতে পারবে? কিভাবে করবে?

জ্বি, রুকইয়াহ সবাই করতে পারবে। মুসলিম/অমুসলিম কোনো ভেদাভেদ নেই এখানে। মুসলিমরা যেভাবে রুকইয়াহ করে, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-অন্যরাও সেভাবেই কর...

Search This Blog

Sunday, April 14, 2019

অভিযোগ সিরিজ (কবিরাজি করি)

অভিযোগ বলি বা ধারনা বলি, আমার মতে এটাই সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার! যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করি সেটাই ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া। দারোয়ানের কাজ পাহাড়া দেয়া। সেই দারোয়ানকেই চোর মনে করা, চুরির দায়ে অভিযুক্ত করা!

রুকইয়াহ সম্পর্কে যার ন্যূণতম জ্ঞান আছে, সে অন্তত এই ধারণা করবে না। সাধারন মানুষ কবিরাজের কাছে যায়, কিছু টাকা দেয় বা না দেয়; কবিরাজ বলে হয়ে যাবে। কিন্তু কিভাবে হবে সেটা আর বলে না। ভয়ে তাকে জিজ্ঞেসও করা যায় না। এত্তবড় কবিরাজ/হুজুর। জিজ্ঞেস করলে যদি আবার আমার কোন ক্ষতি হয়! ইমাম সাহেব উনি, উনি খতিব, উনি মুফতি সাহেব! উনি কি আর ভুল কিছু করবেন?

কাজেই আমরা যখন "বদনজর, জ্বিন, যাদুর" ব্যাপারে কথা বলতে যাই তখন স্বাভাবিক ইম্প্রেশনে মানুষ কবিরাজ/হুজুরই মনে করে। কারন তারা ভাবে কবিরাজ/হুজুররা কুরআন দিয়েই চিকিৎসা করে। আমরাও সে কথাই বলি। কেউ খতিয়ে দেখার কথা ভাবে না যে, তলে তলে কি হচ্ছে। 
এই কারনে কুফরী করা, শিরক করা, ভণ্ড কবিরাজ/হুজুর চেনা জরুরী।

লন্ডনের এক বিখ্যাত রাক্বি (যিনি রুকইয়াহ করেন) কবিরাজ/হুজুর চেনার কিছু উপায় বলেছিলেন। আপনাদের জন্য সেখান থেকে তুলে দিচ্ছিঃ

১. যদি জিজ্ঞেস করে আপনার মায়ের নাম কি,বাবার নাম কি, দাদার নাম কি, বংশ পরিচয় জানতে চায়-ইত্যাদি। 

২. যদি বলে আপনার কাপড়ের অংশ লাগবে/আন্ডারগার্মেন্টেসের অংশ লাগবে/ চুল লাগবে/ দাড়ি লাগবে/কানের দুলটা/গলার চেইনটা লাগবে/হাতের চুড়ি লাগবে। 

৩. যদি সে বলে "একগ্লাস পানি আনেন। আর একটা ছুড়ি আনেন। এবার গ্লাসের পানিতে ছুড়ি চালান।" আপনি চালাবেন আর আপনার মনে হবে আপনি ছুড়ি পানিতে না গোশতের মধ্যে চালাচ্ছেন। 

৪. যদি সে আপনার বাসায় আসে, বসে পড়ে এদিক সেদিক তাকায় আর কি যেন বিড়বিড় করে। সুন্দর সুন্দর কথা বলে কিন্তু সেগুলো কুরআনের আয়াত নয়, হাদীসের দোয়াও নয়। 

৫. যদি এমন বলে (সাধারনত মেয়েদের বলে) যে, আপনি যদি সুস্থ হতে চান তাহলে "এই জিনিস"টা আমাকে আপনার গোপন অঙ্গে ঘষতে হবে। যদি সুস্থ হত চান তাহলে আপনার এই এই অঙ্গ আমাকে ধরতে হবে/ আপনাকে উলঙ্গ হতে হবে -ইত্যাদি ইত্যাদি। (নাউজুবিল্লাহ)

৬. যদি বলে যে, এক বোতল পানি আনেন। বোতলটা টেবিলের উপর/ওয়ারড্রোবের উপর রাখুন। অথবা বলে যে, বোতলের মুখ খুলে হাতে রাখুন। আমি যখন বলব তখন সাথে সাথে মুখ লাগিয়ে দিবেন।

৭. যদি বলে যে, এই নেন এই তাবিজটা/কবচটা গলায়/হাতে/কোমড়ে পড়েন। কারণ প্রায় ৯৯% তাবিজেই শিরক, কুফর বিদ্যমান। ( এই ব্যাপারে পরের কোন পোস্টে বিস্তারিত কথা হবে ইনশাআল্লাহ) 

৮. যদি বলে, চোখ বন্ধ করুন। কিছু একটা দেখতে পাবেন। যখন দেখতে পাবেন তখনই ধরে ফেলবেন। অথবা বলবে যখনই দেখবেন তখনই দু'হাতে মশা মারার মত করে মারবেন।

৯. আপনারা হয়তো অনেক কবিরাজকে দেখে থাকবেন, যারা বলে গরু লাগবে, মুরগি লাগবে, ছাগল লাগবে তাহলে আপনার কাজ হবে। তাদের অনেকে নিজে এসব শয়তানের নামে বলি দেয়, আর অনেকে বলে “জবাই করার পর রক্তটা দিবেন।" তাঁরা এই রক্ত শয়তানের উপাসনায় ব্যবহার করে। যাদুবিদ্যায় বিভিন্ন মৃত প্রাণীর রক্ত ব্যবহার করা খুবই কমন ব্যাপার।

বাংলাদেশের কবিরাজ/হুজুররা আরও কিছু কাজ করে থাকে যেমনঃ

১। কাপড় মাপে, কাপড় ছোট বড় করে দেখায়। একই ভাবে হাত মেপে হাত ছোট বড় দেখায়
২। মুখে দেখেই অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কথা বলে এবং কিছু কিছু মিলেও যায়
৩। জ্যোতিষিদের মত হাত দেখে
৪। কোন কিছু পুতে রাখার জন্য বলে
৫। জ্বিন বোতলে বন্দি করে রেখেছে, জ্বিনকে অমুক জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছে, জ্বিন রক্তে মিশে গেছে -এই জাতীয় উদ্ভট কথা বলে। 
৬। কবিরাজদের একদল নিজের নামের শেষ "শাজলী" যোগ করে। ওরা বলে "সাহাবি জিন" নাকি ওদের খেদমত করে। 
৭। সাত ঘাটের পানি লাগবে, অমুক জায়গায় মাটি লাগবে ইত্যাদি অর্থহীন কাজ করবে
৮। অন্য জনের উপর জ্বিন হাজির করে তাকে দিয়ে কথা বলাবে 
৯। শনিবারে যেতে হবে, মঙ্গলবার যেতে হবে, মাগরিবের পর যেতে হবে -ইত্যাদি অনর্থক শর্ত আরোপ করবে।
১০। নির্দিষ্ট জিনিস খাওয়া নিষেধ করতে পারেন। যেমন,কলা খাওয়া নিষেধ, গোশত খাওয়া যাবে যাবে না- খেলে ওষুধ কাজ করবে না। অন্যকোন ওষুধ খাওয়া যাবে না -ইত্যাদি বলতে পারে।

কাজেই যারা আমাদের সম্পর্কে এমন গর্হিত ধারনা পোষন করেন তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আমরা এই ধরনের কথা বলে থাকি, এই ধরনের কাজ করি থাকি, তার প্রমান দিবেন। আর যদি প্রমান দিতে না পারেন তবে তওবা করে নিজের ধারনা সংশোধন করে নিবেন।

কবিরাজির বাস্তবতা সম্পর্কে কয়েকটা কথা বলি।

১) এদের কাছে গেলে আপনার সমস্যার সমাধান হবে না বরং আপনি জটিল থেকে জটিলতর সমস্যায় আক্রান্ত হবেন। অনেক মানুষ আছেন যার হয়ত সামান্য একটা সমস্যা ছিল। কিন্তু নানান কবিরাজের কাছে দৌড়াতে দৌড়াতে সেই সামান্য সমস্যাকে ভয়াবহ আকারে নিয়ে গিয়েছেন।

২) মেম্বাররা প্রায়ই বলেন, অমুক কবিরাজের কাছে গিয়েছিলাম, তাবিজ দিয়েছিল, এরপর এক মাস ভাল ছিলাম। এরপর আবার এই সমস্যা, ঐ সমস্যা শুরু হয়েছে। আসল কথা হল, শয়তানের একটা কাজ করে দিয়েছেন আপনি তাই একমাস আপনাকে বিরক্ত করেনি। একমাস পরে আবার শয়তানি করবে যেন আমি আবার নতুন করে কোন শয়তানি কুফরীতে লিপ্ত হন। প্রতিবার বড় থেকে বড় গোনাহে আপনি লিপ্ত হয়ে যাবেন। ক্ষুধার্থ কুকুরের মত। মাংস দিবেন, পেট ভরবে, চুপ থাকবে। হজম হয়ে গেলেই আবার ঘেঊ ঘেউ শুরু করবে।

৩) কবিরাজের/হুজুরের দেয়া তাবিজ কিছুদিন পর পর হারিয়ে যায়। ঘটনা একই আপনাকে আবার তাবিজ/টোটকা নিতে হবে। আবারও কোন গোনাহ করতে দিতে হবে।

৪) কেউ কেউ বলে জ্বিন নাকি নিজেই খেদমত করে। ডাহা মিথ্যে কথা। প্রথম দিকে হয়ত ছোট ছোট সমস্যার ব্যাপারে সহায়তা করে আপনার বিশ্বস্ততা অর্জন করতে চাইবে। পরে আপনাকে ঈমানহারা করে ফেলবে। আর পাশাপাশি ভয়ভীতি দেখাবে। আপনিও দেখবেন অমুক কাজ হয়েছে, তমুক কাজ হয়েছে এখন কথা না শুনলে না জানি আমার কি ক্ষতি করে। আমার ফ্যামিলির কি ক্ষতি করে! এ এক ভয়াবহ দুষ্টচক্র।

৫) ঈমানের ন্যুনতম নূর যার অন্তরে আছে তার কাছে কুফরী করা, শিরক করা কবিরাজ/হুজুর/যাদুকরের কাছে গেলেই মনেহবে "আমি ভুল কিছু করলাম নাতো"। মনে অশান্তি, খচখচানি থাকবে সারাজীবন।

অথচ রুকইয়াহ! কুরআনী চিকিৎসা, হাদিসের দোয়া নির্ভর চিকিৎসা। গোপনীয় কোন কিছু নেই। এমন না আমরা গ্রুপে এককথা বলি আর ইনবক্সে অন্য কথা বলি। যারা আমাদের ইনবক্স করেছেন তারা ভাল করেই জানেন কি অবস্থা। এখনো মনে হয় ৩-৪ শ' মেসেজ রিকুয়েস্ট ঝুলে আছে।

এগুলো ঝুলেই থাকবে।

আপনি নিজেই করেন নিজের চিকিৎসা। কারও কাছে যেতে হবে না। আপনার জ্বিন সংক্রান্ত সমস্যা হলে আপনার বাবা, মা, ভাই, বোন, যেকাউকে (যার কুরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ আছে) বলেন আপনাকে রুকইয়াহ করতে। চার আনা পয়সাও আপনাকে খরচ করতে হবে না। তবুও যদি পরামর্শ লাগে ফোন করতে পারেন। প্রথমবারে না ধরলে কিছুক্ষন পর আবার করবেন। +8801745856249

এরপরও যারা "বিচার মানি তালগাছ আমার" টাইপ তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দু'আ। আল্লাহ যেন তাদের হেদায়াত দান করেন। হেদায়াত যদি ভাগ্যে না থাকে তবে যেন তাদের গন্তব্যস্থল শীগ্রীই তাদের দেখিয়ে দেন। আমীণ।