অমুসলিম হলে কি রুকইয়াহ করতে পারবে? কিভাবে করবে?

জ্বি, রুকইয়াহ সবাই করতে পারবে। মুসলিম/অমুসলিম কোনো ভেদাভেদ নেই এখানে। মুসলিমরা যেভাবে রুকইয়াহ করে, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-অন্যরাও সেভাবেই কর...

Search This Blog

Tuesday, December 29, 2020

এত আমল করি কাজ হয় না কেন?

 [ আমার অজ্ঞতা প্রসূত কিছু ধারনা, জীবনের কিছু অভিজ্ঞতার সমষ্টি এই পোস্ট। কাজেই কোনো রেফারেন্স হবে না। যারা রেফারেন্স ছাড়া কিছু গ্রহণ করেন না, তারা এখানেই ক্ষান্ত দিতে পারেন। ]

অনেকদিন ধরে কোনো আমল করছেন বা রুকইয়াহ করছেন তাদের মধ্যে কারও কারও মনে এধরনের প্রশ্ন আসতে পারে। এই প্রশ্নের উত্তরের পালটা প্রশ্ন হল, আপনি কি করে বুঝলেন কাজ হচ্ছে না? কি প্রমাণ আছে? এই যে, সমস্যা শেষ হচ্ছে না, কাঙ্খিত বস্তু পাচ্ছি না, সুস্থ হচ্ছি না - এটাইতো প্রমাণ।
ব্যাপারটা কি সত্যিই এমন?
তর্কের খাতিরেও যদি মেনে নেই কেউ রুকইয়াহ করছে বা কোনো আমল করছে কিন্তু কোনো উপকার দৃশ্যমান হচ্ছে না তাহলে এর পিছনে কি কি বিষয় থাকতে পারেঃ
✅
আপনার ঈমানই নেই
এটা কেমন? কোনো ব্যক্তিকে ঈমানদার বলতে হলে তার কিছু মূল জিনিসের উপর দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে। যেমন, আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি মালাক বা ফেরেশতাকুল। এখন আপনি ফেরেশতায় বিশ্বাস করেন না। ঈমান আছে আপনার?
✅
ঈমান ভেঙে গিয়েছে
আপনি এমন কোনো বিশ্বাস মনে লালন করেন বা এমন কোনো কাজ করেছেন যার ফলে আপনার নাম ঈমানদারের খাতা থেকে কাটা গিয়েছে। যেমন, উঠতি বয়সি কোনো ছেলে দাড়ি রেখেছে অথবা কোনো মেয়ে নেকাব পড়া শুরু করেছে, তাই দেখে আপনি নাক সিটকালেন, জ* হয়ে গিয়েছে, লিভিং টেন্ট, তালে** হয়ে গিয়েছো। ঈমান থাকবে? আলেমদের থেকে জেনে নিবেন।
✅
আমলের উপর বিশ্বাস নেই
আমল করলে কি এটা হবে? রুকইয়াহ করলে সুস্থ হব তো নাকি? আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমল করা। হাদিসে আসছে, এই আমল করলে এই হবে। হাদিস সত্য, অবশ্যই সত্য। কাজেই আমাকে চালিয়ে যেতে হবে।
✅
নিজের উপর আত্মবিশ্বাসের অভাব
আমল করছি ঠিকমত হচ্ছে তো? নাকি কোথাও কিছু মিস গেল? এমন করেছিলাম কি? অমন করেছিলাম কি? ভুল হল নাতো? আগে কি হয়েছে না হয়েছে সেটা না ভেবে পরবর্তীতে কিভাবে আরও সুন্দর করে করা যায় সেটা ভাবতে থাকা।
✅
অমনোযোগীতা
আমল শুরু করে করে আমি দোকানের হিসাব মিলাই, বফ/গফকে কি মেসেজ দিব ইত্যাদি চিন্তা করি, কি রান্না করবো ইত্যাদি চিন্তা করি। আমল আর আমল থাকে না, অভ্যাসে পরিনত হয়। উচিত হল, সব চিন্তা সাইডে রেখে আমলে মন দেয়া, কি পড়ছি, উচ্চারন সহি করে পড়া, অর্থ মাথায় রাখায়, দিল লাগিয়ে আমল করা। যতটুকু পারা যায়। শয়তান মন ঘুড়িয়ে দিবে, আবার টেনে নিয়ে আসতে হবে।
✅
অনাগ্রহ
এই সমস্যায় ভুগেন যারা দীর্ঘদিন ধরে কোনো আমল করছেন তারা। আমল করতে করতে হাপিয়ে যান। ধূর, আর কত আমল করবো? তখন করলেও প্রথম প্রথম যেমন আগ্রহের সাথে শুরু করেছিলেন তেমন আগ্রহ আর থাকে না। অনাগ্রহের সাথে আমল করেন, আমলে “প্রাণ” থাকে না। এটা কাম্য নয়।
✅
কবীরা গুনাহ থেকে বাঁচি না
বিজ্ঞ আলেমদের মতে, সগীরা গুনাহগুলো সালাতের দ্বারা মাফ হয়ে যায়। (সালাত সালাতের মত না হলে কতটুকু মাফ হবে সেটাও বিষয়) কিন্তু কবীরা গুনাহের জন্য তওবা করা জরুরী। তওবার মানে এই না, দুইগালে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে মুখে তওবা তওবা বললাম। বরং আল্লাহর ভয়ে অন্তর থেকে অনুতপ্ত হয়ে উক্ত কাজ আর জীবনেও না করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করার নামই তওবা। আমলও করছি, গুনাহও করছি এমন যেন না হয়।
✅
সুদ থেকে বেঁচে থাকা
এই গুনাহের কথা আলাদা করে লিখা উচিত বলেই লিখলাম। এটা অতি জঘন্য পর্যায়ের গুনাহ। আল্লাহ তায়ালার পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিসই গ্রহণ করবেন। দেহের প্রতিটি রক্তকনায় বইছে সুদের দ্বারা আহরিত খাদ্যকণা। এমতাবস্থায়, সিজদা দিতে দিতে কপালে দাগ ফেলে দিলেও কোনো লাভ হবে কিনা বিজ্ঞ আলেমের সাথে পরামর্শ করে জেনে নেয়া উচিত।
✅
শরীর/ঘর শয়তানি জিনিসপত্র থেকে পবিত্র রাখা
হয়ত কারও ঘরে কুকুর আছে, আছে কোনো প্রাণীর ছবি। সেখানে রহমতের ফেরেশতা ঢুকবে না। হয়ত শরেঈ কোনো শিরক, কুফর মিশ্রিত তাবিজ-কবচ আছে। এই কারণে আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
✅
আমল পূর্ণ না হওয়া
ডাক্তার যখন প্রেস্ক্রিপশন লিখেন তখন একটা সময় লিখে দেন যে, এই ওষুধ এত দিন খাবেন, এতবার করে খাবেন। এরপর আবার আসবেন। শরীর সুস্থ না হলে পরবর্তী কথা শুনে দরকার হলে ওষুধ পরিবর্তন করে দেন বা আরও চালিয়ে যেতে পারেন। আমল, রুকইয়াহর ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে। হয়ত যতদিন আমল করলে আমি সুস্থ হব ততদিন আমল করিনি, যতবার করলে কাঙ্খিত বস্তু পাওয়া যাবে ততবার করি নি। কাজেই চালিয়ে যাওয়া, হতাশ না হওয়া।
উপরোক্ত বিষয়গুলো যদি কারও ক্ষেত্রে ঠিকও থাকে আর সে ভাবে তার কোনো কাজে আসছে না তাহলে সেটা ভুল ধারনা। আমলের ফলাফল বোধগম্য হতেই হবে এমন কোনো শর্ত আছে কি? আপনার এই অসুস্থতা/বিপদ না থাকলে আপনি হয়ত এখন যেভাবে আল্লাহকে ডাকছেন সেভাবে ডাকতেন না। আপনি হয়ত আর দশজন মানুষের মতই গাফেল থাকতেন। আপনার তো আল্লাহর শুকরিয়া করা উচিত যে, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ভালবাসেন বলেই এমন পরিস্থিতিতে ফেলেছেন যেন আপনি আল্লাহ তায়ালাকে ডাকেন। আপনি বিশ্বাস রাখেন, এই বিপদের বদলা হিসেবে আল্লাহ তায়ালা এমন পুরস্কার দিবেন যে আপনার অন্তর প্রশান্ত হয়ে যাবে।
[ নিজের কর্মফল ভোগ করাকে এই পোস্টের সাথে গুলিয়ে না ফেলি ]